
বাংলা রোমান্টিক কবিতা সমগ্র
Bengali Poem | Click Here |
Bangla Premer Kobita | Click Here |
Bangla Romantic Kobita | Click Here |
Bangla Sad Kobita | Click Here |
Bangla Love Kobita | Click Here |
Rabindranath Thakur Kobita List | Click Here |
যখন বৃষ্টি নামলো
– শক্তি চট্টোপাধ্যায়
বুকের মধ্যে বৃষ্টি নামে, নৌকা টলোমলো
কূল ছেড়ে আজ অকূলে যাই এমনও সম্বল
নেই নিকটে – হয়তো ছিলো বৃষ্টি আসার আগে
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, তাই কি মনে জাগে
পোড়োবাড়ির স্মৃতি? আমার স্বপ্নে-মেশা দিনও?
চলচ্ছক্তিহীন হয়েছি, চলচ্ছক্তিহীন।
বৃষ্টি নামলো যখন আমি উঠোন-পানে একা
দৌড়ে গিয়ে ভেবেছিলাম তোমার পাবো দেখা
হয়তো মেঘে-বৃষ্টিতে বা শিউলিগাছের তলে
আজানুকেশ ভিজিয়ে নিচ্ছো আকাশ-ছেঁচা জলে
কিন্তু তুমি নেই বাহিরে- অন্তরে মেঘ করে
ভারি ব্যাপক বৃষ্টি আমার বুকের মধ্যে ঝরে!
যদি মন কাঁদে
– হুমায়ূন আহমেদ
যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো,
চলে এসো, এক বরষায়…
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে, জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায় ।
চলে এসো, তুমি চলে এসো, এক বরষায়…
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি,
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি ।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলী আলো
তুমি চলে এসো, এক বরষায়…
নামিবে আঁধার বেলা ফুরাবার ক্ষণে
মেঘমল্লা বৃষ্টিরও মনে মনে ।
কদম গুচ্ছ খোঁপায়ে জড়ায়ে দিয়ে
জলভরা মাঠে নাচিব তোমায় নিয়ে
চলে এসো, চলে এসো, এক বরষায়…
মেঘের পরে মেঘ জমেছে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মেঘের পরে মেঘ জমেছে,
আঁধার করে আসে,
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
কাজের দিনে নানা কাজে
থাকি নানা লোকের মাঝে,
আজ আমি যে বসে আছি
তোমারি আশ্বাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
তুমি যদি না দেখা দাও,
কর আমায় হেলা,
কেমন করে কাটে আমার
এমন বাদল-বেলা।
দূরের পানে মেলে আঁখি
কেবল আমি চেয়ে থাকি,
পরান আমার কেঁদে বেড়ায়
দুরন্ত বাতাসে।
আমায় কেন বসিয়ে রাখ
একা দ্বারের পাশে।
আজ বারি ঝরে ঝর ঝর
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজ বারি ঝরে ঝর ঝর
ভরা বাদরে।
আকাশ-ভাঙা আকুল ধারা
কোথাও না ধরে।
শালের বনে থেকে থেকে
ঝড় দোলা দেয় হেঁকে হেঁকে,
জল ছুটে যায় এঁকেবেঁকে
মাঠের ‘পরে।
আজ মেঘের জটা উড়িয়ে দিয়ে
নৃত্য কে করে।
ওরে বৃষ্টিতে মোর ছুটেছে মন,
লুটেছে ওই ঝড়ে,
বুক ছাপিয়ে তরঙ্গ মোর
কাহার পায়ে পড়ে।
অন্তরে আজ কী কলরোল,
দ্বারে দ্বারে ভাঙল আগল,
হৃদয়-মাঝে জাগল পাগল
আজি ভাদরে।
আজ এমন করে কে মেতেছে
বাহিরে ঘরে।
বৃষ্টিতে হই একাকার
– রেদোয়ান মাসুদ
মেঘ জমেছে, আকাশ কাপছে, চারিদিকে অন্ধকার
এমন দিনে প্রয়োজন আমার শুধু ভালোবাসার।
আয় না তুই বাইরে আয়, বৃষ্টিতে হই একাকার
ভিজে ভিজে হয়ে যাই আমরা, দুজন দুজনার।
ভালোবাসা বাড়ুক না আজ হোক নিরাকার
যেদিকে খুশি সেদিকে যাবো, না মানি কে কোথাকার।
আয় না তুই বাইরে আয়, ভেঙ্গে সকল অহংকার
দিনটি আজ হয়ে থাকুক না শুধুই ভালোবাসার।
বৃষ্টির দিনে শীতল আবহে কেন থাকবে হৃদয়ে হাহাকার
ভালোবাসার আবরণে জোড়া দেই সকল অধিকার।
চল না আজ দুজন হৃদয়ের খেলায়, হই খেলোয়ার
বৃষ্টির জলে পুলিকিত হৃদয়ে আসুক জোয়ার।
মেঘবালিকার জন্য রূপকথা
– জয় গোস্বামী
আমি যখন ছোট ছিলাম
খেলতে যেতাম মেঘের দলে
একদিন এক মেঘবালিকা
প্রশ্ন করলো কৌতুহলে
‘এই ছেলেটা, নাম কি রে তোর?’
আমি বললাম, ফুস মন্তর
মেঘবালিকা রেগেই আগুন,
মিথ্যে কথা, নাম কি অমন হয় কখনো?
আমি বললাম, নিশ্চয়ই হয়,
আগে আমার গল্প শোনো
সে বলল, শুনবো না যা,
সেই তো রাণী সেই তো রাজা
সেই তো একই ঢাল তলোয়ার
সেই তো একই রাজার কুমার পক্ষিরাজে
শুনবো না আর ওসব বাজে।
আমি বললাম, তোমার জন্য নতুন করে লিখব তবে।
সে বলল, সত্যি লিখবি!
বেশ তাহলে মস্ত করে লিখতে হবে।
মনে থাকবে? লিখেই কিন্তু আমায় দিবি।
আমি বললাম, তোমার জন্য লিখতে পারি এক পৃথিবী।
লিখতে লিখতে লেখা যখন সবে মাত্র দু চার পাতা
হঠাৎ তখন ভুত চাপলো আমার মাথায়
খুঁজতে খুঁজতে চলে গেলাম ছোটবেলার মেঘের মাঠে
গিয়েই দেখি, চেনা মুখ তো একটিও নেই এ তল্লাটে
একজনকে মনে হল ওরই মধ্যে অন্যরকম
এগিয়ে গিয়ে বলি তাকেই
তুমি কি সেই মেঘবালিকা, তুমি কি সেই?
সে বলেছে, মনে তো নেই।
আমার ওসব মনে তো নেই
আমি বললাম, তুমি আমায় লেখার কথা বলেছিলে।
সে বলল, সঙ্গে আছে? ভাসিয়ে দাও গাঁয়ের ঝিলে।
আর হ্যা, শোন, এখন আমি মেঘ নই আর
সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়।
বলেই হঠাৎ এক পশলায় আমায় পুরো ভিজিয়ে দিয়ে
অন্য অন্য বৃষ্টি বাদল সঙ্গে নিয়ে
মিলিয়ে গেল দূরে কোথায়, দূরে দূরে…।
বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়
বৃষ্টি বলে ডাকে আমায়, আপন মনে বলতে বলতে
আমিই কেবল বসে রইলাম ভিজে
এক-সা কাপড় জামায়
গাছের তলায় বসে রইলাম
বৃষ্টি নাকি মেঘের জন্য
এমন সময় অন্য একটি বৃষ্টি
আমায় চিনতে পেরে বলল
তাতে মন খারাপের কি হয়েছে?
যাও ফিরে যাও-লেখ আবার
এখন পুরো বর্ষা চলছে,
তাই আমরা সবাই এখন নানান দেশে ভীষণ ব্যস্ত
তুমিও যাও, মন দাও গে তোমার কাজে।
বর্ষা থেকে ফিরে আমরা নিজেই যাব তোমার কাছে।
এক পৃথিবী লিখবো আমি
এক পৃথিবী লিখবো বলে
ঘর ছেড়ে সেই বেড়িয়ে গেলাম
ঘর ছেড়ে সেই ঘর বাঁধলাম গহিন বনে
সঙ্গী শুধু কাগজ কলম
একাই থাকব, একাই দুটো ফুটিয়ে খাব
ধুলোবালি দু এক মুঠো যখন যারা আসবে মনে
তাদের লিখব, লিখেই যাব।
এক পৃথিবীর একশ রকম স্বপ্ন দেখার
সাধ্য থাকবে যে রূপকথার
সে রূপকথা আমার একার।
ঘাড় গুজে দিন লিখতে লিখতে
ঘাড় গুজে রাত লিখতে লিখতে
মুছেছে দিন মুছেছে রাত
যখন আমার লেখবার হাত অসাড় হল
মনে পড়ল, সাল কি তারিখ, বছর কি মাস
সেসব হিসেব আর রাখি নি।
লেখার দিকে তাকিয়ে দেখি
এক পৃথিবী লিখব বলে একটা খাতাও শেষ করিনি।
সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল খাতার উপর,
আজীবনের লেখার উপর
বাইরে তখন গাছের নিচে নাচছে ময়ূর আনন্দিত
এ গাছ ও গাছ উড়ছে পাখি, বলছে পাখি
এই অরণ্যে কবির জন্যে আমরা থাকি
বলছে ওরা, কবির জন্য আমরা কোথাও,
আমরা কোথাও, আমরা কোথাও হার মানিনি।
কবি তখন কুটির থেকে, তাকিয়ে আছে অনেক দূরে
বনের পরে মাঠের পরে নদীর পরে
সেই যেখানে সারা জীবন বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে
সেই যেখানে কেউ যায়নি, কেউ যায় না কোনদিনই
আজ সে কবি দেখতে পাচ্ছে
সেই দেশে সেই ঝর্ণা তলায়
এদিক ওদিক ছুটে বেড়ায়
সোনায় মোড়া মেঘ হরিণী
কিশোর বেলার সেই হরিণী।
আজি ঝড়ের রাতে
– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার,
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
আকাশ কাঁদে হতাশ-সম,
নাই যে ঘুম নয়নে মম,
দুয়ার খুলি হে প্রিয়তম,
চাই যে বারে বার।
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
বাহিরে কিছু দেখিতে নাহি পাই,
তোমার পথ কোথায় ভাবি তাই।
সুদূর কোন্ নদীর পারে,
গহন কোন্ অন্ধকারে
হতেছ তুমি পার।
পরানসখা বন্ধু হে আমার।
গোপন প্রিয়া
– কাজী নজরুল ইসলাম
পাইনি বলে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রাণি,
মধ্যে সাগরে, এ-পারে ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাধার পাথার
ও-পার হতে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁয়া খানি।
নাম-শোনা দুই বন্ধু মোরা, হয়নি পরিচয় !
আমার বুকে কাঁদছে আশা, তোমার বুকে ভয় !
এই-পারী ঢেউ বাদল-বায়ে
আছড়ে পড়ে তোমার পায়ে,
আমার ঢেউ-এর দোলায় তোমার করলো না কূল ক্ষয়,
কূল ভেঙেছে আমার ধারে-তোমার ধারে নয় !
চেনার বন্ধু, পেলাম না ক জানার অবসর ।
গানের পাখী বসেছিলাম দু’দিন শাখার পর ।
গান ফুরালো যাব যবে
গানের কথাই মনে রবে,
পাখী তখন থাকবে না ক-থাকবে পাখীর ঘর,
উড়ব আমি,-কাঁদবে তুমি ব্যথার বালুচর !
তোমার পারে বাজল কখন আমার পারের ঢেউ,
অজানিতা! কেউ জানে না, জানবে না ক কেউ।
উড়তে গিয়ে পাখা হতে
একটি পালক পড়লে পথে,
ভুলে প্রিয় তুলে যেন খোঁপায় গুঁজে নেও !
ভয় কি সখি? আপনি তুমি ফেলবে খুলে এ-ও !
বর্ষা-ঝরা এমনি প্রাতে আমার মত কি
ঝুরবে তুমি একলা মনে, বনের কেতকী ?
মনের মনে নিশীথ-রাতে
চুমু দেবে কি কল্পনাতে ?
স্বপ্ন দেখে উঠবে জেগে, ভাববে কত কি !
মেঘের সাথে কাঁদবে তুমি, আমার চাতকী !
দূরের প্রিয়া! পাইনি তোমায় তাই এ কাঁদন-রোল !
কূল মেলে না,-তাই দরিয়ায় উঠতেছে ঢেউ-দোল !
তোমায় পেলে থামত বাঁশী,
আসত মরণ সর্বনাশী ।
পাইনি ক তাই ভরে আছ আমার বুকের কোল।
বেণুর হিয়া শূন্য বলে উঠছে বাঁশীর বোল ।
বন্ধু, তুমি হাতের-কাছের সাথের-সাথী নও,
দূরে যত রও এ হিয়ার তত নিকট হও ।
থাকবে তুমি ছায়ার সাথে
মায়ার মত চাঁদনী রাতে !
যত গোপন তত মধুর-নাই বা কথা কও !
শয়ন-সাথে রও না তুমি নয়ন-পাতে রও !
ওগো আমার আড়াল-থাকা ওগো স্বপন-চোর !
তুমি আছ আমি আছি এই তো খুশি মোর ।
কোথায় আছ কেমনে রাণি
কাজ কি খোঁজে, নাই বা জানি!
ভালোবাসি এই আনন্দে আপনি আছি ভোর !
চাই না জাগা, থাকুক চোখে এমনি ঘুমের ঘোর !
রাত্রে যখন একলা শোব-চাইবে তোমার বুক,
নিবিড়-ঘন হবে যখন একলা থাকার দুখ ।
দুখের সুরায় মস্ত্ হয়ে
থাকবে এ-প্রাণ তোমায় লয়ে,
কল্পনাতে আঁকব তোমার চাঁদ-চুয়ানো মুখ !
ঘুমে জাগায় জড়িয়ে রবে, সেই তো চরম সুখ ।
গাইব আমি, দূরের থেকে শুনবে তুমি গান।
থামবে আমি-গান গাওয়াবে তোমার অভিমান !
শিল্পী আমি, আমি কবি,
তুমি আমার আঁকা ছবি,
আমার লেখা কাব্য তুমি, আমার রচা গান ।
চাইব না ক, পরান ভরে করে যাব দান ।
তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির ।
গোপন তুমি আসলে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাকব বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর ?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড় !
বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় করবে না ক-সেই তো মনে স্থান !
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
করবে মনে, সে-দিন প্রিয়ে,
ভোলার মাঝে উঠবে বেজে, সেই তো আমার প্রাণ !
নাই বা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেলে গেলাম গান !
অপরাধ শুধু মনে থাক
– কাজী নজরুল ইসলাম
মোর অপরাধ শুধু মনে থাক!
আমি হাসি, তার আগুনে আমারই
অন্তর হোক পুড়ে খাক!
অপরাধ শুধু মনে থাক!
নিশীথের মোর অশ্রুর রেখা
প্রভাতে কপোলে যদি যায় দেখা,
তুমি পড়িয়ো না সে গোপন লেখা
গোপনে সে লেখা মুছে যাক
অপরাধ শুধু মনে থাক!
এ উপগ্রহ কলঙ্ক-ভরা
তবু ঘুরে ঘিরি তোমারই এ ধরা,
লইয়া আপন দুখের পসরা
আপনি সে খাক ঘুরপাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
জ্যোৎস্না তাহার তোমার ধরায়
যদি গো এতই বেদনা জাগায়,
তোমার বনের লতায় পাতায়
কালো মেঘে তার আলো ছাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
তোমার পাখির ভুলাইতে গান
আমি তো আসিনি, হানিনি তো বাণ,
আমি তো চাহিনি কোনো প্রতিদান,
এসে চলে গেছি নির্বাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক।
কত তারা কাঁদে কত গ্রহে চেয়ে
ছুটে দিশাহারা ব্যোমপথ বেয়ে,
তেমনই একাকী চলি গান গেয়ে
তোমারে দিইনি পিছু-ডাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
কত ঝরে ফুল, কত খসে তারা,
কত সে পাষাণে শুকায় ফোয়ারা,
কত নদী হয় আধ-পথে হারা,
তেমনই এ স্মৃতি লোপ পাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
আঙিনায় তুমি ফুটেছিলে ফুল
এ দূর পবন করেছিল ভুল,
শ্বাস ফেলে চলে যাবে সে আকুল –
তব শাখে পাখি গান গাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
প্রিয় মোর প্রিয়, মোরই অপরাধ,
কেন জেগেছিল এত আশা সাধ!
যত ভালোবাসা, তত পরমাদ,
কেন ছুঁইলাম ফুল-শাখ।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
আলোয়ার মতো নিভি,পুনঃ জ্বলি,
তুমি এসেছিলে শুধু কুতূহলী,
আলেয়াও কাঁদে কারও পিছে চলি –
এ কাহিনি নব মুছে যাক।
অপরাধ শুধু মনে থাক!
সে
– জীবনানন্দ দাশ
আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে;
বলেছিলোঃ ‘এ নদীর জল
তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল;
সব ক্লান্তি রক্তের থেকে
স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি;
এই নদী তুমি।’
‘এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?’
মাছরাঙাদের বললাম;
গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম।
আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি;
জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে
কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে।
সময়ের অবিরল শাদা আর কালো
বনানীর বুক থেকে এসে
মাছ আর মন আর মাছরাঙাদের ভালোবেসে
ঢের আগে নারী এক – তবু চোখ ঝলসানো আলো
ভালোবেসে ষোলো আনা নাগরিক যদি
না হয়ে বরং হতো ধানসিঁড়ি নদী।
লোকেন বোসের জর্নাল
– জীবনানন্দ দাশ
সুজাতাকে ভালোবাসতাম আমি –
এখনো কি ভালোবাসি?
সেটা অবসরে ভাববার কথা,
অবসর তবু নেই;
তবু একদিন হেমন্ত এলে অবকাশ পাওয়া যাবে
এখন শেলফে চার্বাক ফ্রয়েড প্লেটো পাভলভ ভাবে
সুজাতাকে আমি ভালোবাসি কি না।
পুরোনো চিঠির ফাইল কিছু আছে:
সুজাতা লিখেছে আমার কাছে,
বারো তেরো কুড়ি বছর আগের সে সব কথা;
ফাইল নাড়া কি যে মিহি কেরানীর কাজ;
নাড়বো না আমি
নেড়ে কার কি লাভ;
মনে হয় অমিতা সেনের সাথে সুবলের ভাব,
সুবলেরই শুধু? অবশ্য আমি তাকে
মানে এই – অমিতা বলছি যাকে –
কিন্তু কথাটা থাক;
কিন্তু তবুও –
আজকে হৃদয় পথিক নয়তো আর,
নারী যদি মৃগতৃষ্ণার মতো – তবে
এখন কি করে মন কারভান হবে।
প্রৌঢ় হৃদয়, তুমি
সেই সব মৃগতৃষ্ণিকাতলে ঈষৎ সিমুমে
হয়তো কখনো বৈতাল মরুভুমি,
হৃদয়, হৃদয় তুমি!
তারপর তুমি নিজের ভিতরে ফিরে এসে তব চুপে
মরীচিকা জয় করেছো বিনয়ী যে ভীষন নামরূপে
সেখানে বালির সৎ নিরবতা ধূ ধূ
প্রেম নয় তবু প্রমেরই মতন শুধু।
অমিতা সেনকে সুবল কি ভালোবাসে?
অমিতা নিজে কি তাকে?
অবসর মতো কথা ভাবা যাবে,
ঢের অবসর চাই;
দূর ব্রহ্মাণ্ডকে তিলে টেনে এনে সমাহিত হওয়া চাই
এখনি টেনিসে যেতে হবে তবু,
ফিরে এসে রাতে ক্লাবে;
কখন সময় হবে।
হেমন্তে ঘাসে নীল ফুল ফোঁটে –
হৃদয় কেন যে কাঁপে,
ভালোবাসতাম – স্মৃতি – অঙ্গার – পাপে
তর্কিত কেন রয়েছে বর্তমান।
সে ও কি আমায় –
সুজাতা আমায় ভালোবেসে ফেলেছিলো?
আজো ভালোবাসে নাকি?
ইলেকট্রনেরা নিজ দোষগুনে বলয়িত হয়ে রবে;
কোনো অন্তিম ক্ষালিত আকাশে এর উত্তর হবে?
সুজাতা এখন ভুবনেশ্বরে;
অমিতা কি মিহিজামে?
বহুদিন থেকে ঠিকানা না জেনে ভালোই হয়েছে – সবই।
ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে;
সময়ের এই স্থির এক দিক,
তবু স্থিরতর নয়;
প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।
পঁচিশ বছর পরে
– জীবনানন্দ দাশ
শেষবার তার সাথে যখন হয়েছে দেখা মাঠের উপরে
বলিলাম: ‘একদিন এমন সময়
আবার আসিয়ো তুমি, আসিবার ইচ্ছা যদি হয়!
পঁচিশ বছর পরে!’
এই বলে ফিরে আমি আসিলাম ঘরে;
তারপর কতবার চাঁদ আর তারা,
মাঠে মাঠে মরে গেল, ইদুর – পেচাঁরা
জোছনায় ধানক্ষেতে খুঁজে
এল গেল। -চোখ বুজে
কতবার ডানে আর বায়ে
পড়িল ঘুমায়ে
কত-কেউ! – রহিলাম জেগে
আমি একা – নক্ষত্র যে বেগে
ছুটিছে আকাশে,
তার চেয়ে আগে চলে আসে
যদিও সময়-
পঁচিশ বছর তবু কই শেষ হয়!-
তারপর – একদিন
আবার হলদে তৃণ
ভরে আছে মাঠে-
পাতায় শুকনো ডাঁটে
ভাসিছে কুয়াশা
দিকে দিকে, চুড়ায়ের ভাঙা বাসা
শিশিরে গিয়েছে ভিজে – পথের উপর
পাখির ডিমের খোলা, ঠান্ডা-কড়কড়!
শসাফুল – দু-একটা নষ্ট শাদা শসা,
মাকড়ের ছেঁড়া জাল, শুকনো মাকড়সা
লতায় – পাতায়;
ফুটফুটে জোছনারাতে পথ চেনা যায়;
দেখা যায় কয়েকটা তারা
হিম আকাশের গায়, – ইদুর পেঁচারা
ঘুরে যায় মাঠে মাঠে,
ক্ষুদ খেয়ে ওদের পিপাসা আজও মেটে,
পঁচিশ বছর তবু গেছে কবে কেটে!
2 thoughts on “Bangla Romantic Kobita – বাংলা রোমান্টিক প্রেমের কবিতা সমগ্র”
Comments are closed.