Bangla Love Kobita – বাংলা প্রেমের কবিতা

WhatsApp Group Join Now
Instagram Profile Join Now
Telegram Channel Join Now

Bangla Love Kobita

Bangla Love Kobita

প্রেম প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু সেগুলিকে ব্যাখ্যা করা বা উপস্থাপনা করার মতো কোনো ভাষা থাকে না। কবিতার মাধ্যমে প্রেম কে আরো প্রস্ফুটিত করে তোলে। এর জন্য কবি প্রেম জীবনের প্রতি অনেক কবিতা রচনা করেছেন। নিচে দেওয়া হল তাদের মধ্যে কিছু বিখ্যাত  বাংলা প্রেমের কবিতা

Bengali PoemClick Here
Bangla Premer KobitaClick Here
Bangla Romantic KobitaClick Here
Bangla Sad KobitaClick Here
Bangla Love KobitaClick Here
Rabindranath Thakur Kobita List  Click Here

প্রেম দিতে থাকো

 – শক্তি চট্টোপাধ্যায় 

মালবিকা স্তন দাও, দুই স্তনে মাখামাখি করি।

যেভাবে পর্বতশীর্ষে টেনে আনি বুকের পাঁজরে

সেইভাবে নদী আনি গহ্বরে বুকের,

মালবিকা দেহ দাও আলিঙ্গন করি,

যেভাবে পর্বত-নদী করি আলিঙ্গন,

সেইভাবে, মালবিকা বৃদ্ধে সুখ দাও-

অজপা রেখো না তাকে, প্রেম দিতে থাকো।


প্রতিকৃতি

  – শক্তি চট্টোপাধ্যায় 

শুয়ো না কখনো দিনে মৃত ঝরা বাতিটার পাশে।

ও কার চোখের জল ও কার মুখের মতো ম্লান;

প্রতিকূল হাওয়া এসে দাঁড়ালেই শুরু বালি খসা

খুঁজি সে সোনালি চুল চুল চুল তখনো আকাশে।

পাই না; ঘুরায়ে তালু মুছে দেবো চোখের আভাস

হে বিষণ্ণ মর্মরের ফোঁটা যেন নীরবে সাজানো

দেবতা, সুদূর স্মৃতি; প্রতিমা কি প্রচ্ছায়া তোমার।

পুরানো ধূলায় খুঁজি, ধূলা হতে পুরানো হৃদয়ে।

কখন ঢেকেছি মুখ আপনার দুঃখ মুছে নিতে 

বেদনা, অপর কষ্ট; এবং উজ্জ্বল বাতায়নে

প্রকৃতির সম্ভাবন, স্থিতি, সুখ উত্তাল মৌসুমী…

আতিশয্য দেখে চোখ অকারণ গলে গেছে কিনা

জানি না; সে-স্বপ্নে রাতে অবশ্য তন্দ্রায় গাঢ় প্রেম

তোমার মুখের ‘পরে, বুকে, নাতিশীতল হৃদয়ে

আমারি চোখের অশ্রু, অকস্মাৎ স্খলিত বিন্যাস…

দুঃখের মুকুর তুমি অন্ধকারে আমার সান্ত্বনা॥


যশের মন্দির

  – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

সুবর্ণ-দেউল আমি দেখিনু স্বপনে

অতি-তুঙ্গ শৃঙ্গ শিরে! সে শৃঙ্গের তলে,

বড় অপ্রশস্ত সিঁড়ি গড়া মায়া-বলে,

বহুবিধ রোধে রুদ্ধ উর্দ্ধগামী জনে!

তবুও উঠিতে তথা– সে দুর্গম স্থলে–

করিছে কঠোর চেষ্টা কষ্ট সহি মনে

বহু প্রাণী। বহু প্রাণী কাঁদিছে বিকেলে,

না পারি লভিতে যত্নে সে রত্ন-ভবনে।

ব্যথিল হৃদয় মোর দেখি তা সবারে।–

শিয়রে দাঁড়ায়ে পরে কহিলা ভারতী,

মৃদু হাসি; “ওরে বাছা, না দিলে শকতি

আমি, ও দেউলে কার সাধ্য উঠিবারে?

যশের মন্দির ওই; ওথা যার গতি,

অশক্ত আপনি যম ছুঁইতে রে তারে!”


  জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা

 – শামসুর রাহমান 

জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, অবসন্ন হাটুরের মতো বসে আছি

হাঁটু মুড়ে নগর ভেলায়।

এ এক প্রকৃত খেলা, এই ভেসে-যাওয়া তীরবর্তী শোভা দেখে,

জ্যোৎস্নার মাধ্যমে গড়ে তোলা মধুর সম্পর্ক কোনো

মহিলার সাথে।

বাতিল প্রেমিক যদি ফের খুঁজে পায় বেলাবেলি সম্প্রীতির ডেরা,

তাহ’লে সে নীলিমাকে জানিয়ে অভিবাদন, প্রায়

ফুরফুরে প্রজাপতি হয়ে উড়ে উড়ে অপরাহ্নে

ঘাসের অম্লান সবুজকে চুমু খেয়ে, হাত রেখে

খরগোশ অথবা কাঠবিড়ালীর পিঠে, হাত রেখে

খরগোশ অথবা কাঠবিড়ালীর পিঠে, দেয়ালের শ্যাওলায়

মগ্ন হবে গৃহপ্রবেশের সূরে এক লহমায়। কয়েক শতাব্দী তার

আঙুলে উঠবে নেচে, দেশলাই জ্বালালে আঁধারে

প্রাচীন দেয়ালচিত্র অকস্মাৎ হবে উন্মোচিত, বুঝিবা আহত হবে

কাতর হৃদয় তার অতীতের অসামাজিকতা হেতু আর

রাখবে সে চোখ টিকটিকি কিংবা বাতির ওপর।

জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, ঢাকাও মরাল হতে জানে

পূর্ণিমায়, দেখে নিই। যেন দরদালান সমেত যাচ্ছে উড়ে

দুলিয়ে বিপুল ডানা মগজের জ্যোৎস্নায় আমার।

ওলোট-পালোট কত স্মৃতি গোলাপের মতো ঝরে

এখন আমাকে ঘিরে, ঘ্রাণে নেশাতুর হয়ে পড়ি।

শৈশব কাঠের ঘোড়া চেপে আসে, যৌবনের খর দিনগুলি,

রাত্রিগুলি খুব মেশামেশি করে রক্ত কণিকায়,

চামর দোলায় কোন, অব্যক্ত তরুণী, তবু কিছু স্বেদচিহ্ন

থেকে যায় আমার এ শরীর-পেরুনো অন্য এক অবয়বে।

জ্যোৎস্নায় ভাসছে ঢাকা, আমিও ভাসছি ক্রমাগত।

জ্যোৎস্নায় ভাসছে, ঢাকা ওরা মৃত, ওরা পূর্বগামী পরিজন,

বুঝি ওরা বারংবার মরীচিকার চিৎকার শুনে

ছুটে গেছে, কোথায় যে মরুদ্যান প্রস্রবণ নিয়ে

আমন্ত্রণে উন্মুখর বেলা শেষে, করেনি খেয়াল। ওরা মৃত,

ভ্রান্তির গহ্বরে ওরা হারিয়ে ফেলেছে কণ্ঠস্বর।

দেখি প্লেগ-কবলিত শহরের মতো

ক্রুর অমাবস্যার এলাকা-

ছিন্নভিন্ন জামা, জীর্ণ জুতো পড়ে আছে ইতস্ততঃ

কাঁটাগুল্ম, পাথরের মধ্যে, ফুলের কেয়ারিগুলি ভরে ওঠে

পচা নাড়িভুড়ি আর হাড়গোড়ে। দেখি কতিপয়

ন্যাংটো লোক পথে

করছে বপন মৃত্যু,-আমি কি অসুস্থ হয়ে পড়ছি তাহ’লে?

আমার অসুখ বলে ঢাকা মন খারাপ করেছে।

ওর চোখে-মুখে বিষণ্নতা জেগে থাকে সারাক্ষণ,

যত বলি ফুল্ল স্বরে, ভেবোনা লক্ষ্মীটি, আমি খুব

তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবো, দেখে নিও,

তত সে খারাপ করে মন, চোখে জমে অশ্রুকণা,

আমার শিয়রে বসে থাকে ঠিক নার্সের ধরনে।

জ্যোৎস্নায় ভাসছো তুমি ঢাকা বেসামাল পূর্ণিমায়।

যাবো না স্বাস্থ্যের লোভে কোনো শৈলাবাসে,

তুমি আছি থেকো তুমি আমার অসুখ সেরে যাবে।

জ্বরদগ্ধ চোখে দেখি জ্যোৎস্না-ধোয়া স্নেহজাত পথ্য

তার হাতে নাচ আর রোজ নিয়ে আসে কিছু ফুল

রোগীর টেবিলে সুখ ফোটানোর অমল উদ্দেশ্যে।

আমার অস্তিত্ব থেকে অসুখের ছায়া সরে যাচ্ছে, দেখে যাও।

    (প্রতিদিন ঘরহীন ঘরে কাব্যগ্রন্থ)


অপ্রেমের কবিতা

 – শামসুর রাহমান 

এক্ষুণি বলে ফেলা দরকার, নইলে খুব বেশি

দেরি হয়ে যাবে। সত্যাসত্য নিয়ে ঝাক্কিঝামেলা,

তর্কাতর্কি মূলতুবি রেখে

বোধোদয়ের বাগান থেকে

পরগাছাগুলোকে একটু হাত লাগিয়ে

উপড়ে ফেলা যাক

সময় আমাকে তাড়া করে। গাছে লটকানো

হিস্পানি গিটার জপায়, স্বীকারোক্তি চাই।

এতদিন যে তাসের ঘর তৈরি হয়েছিল

আমার মনের খেয়ালে, বৈরী হাওয়ার ফুৎকারে

তা লহমায় ভূমিসাৎ। অগ্নিবলয়ের এপার থেকে

দেখলাম, একটা জতুগৃহ গলে গলে

মাটির সঙ্গে মিশে গেল। সেই

অগ্নিকাণ্ডের তাণ্ডবমুক্ত একটি পাথরে

তোমার নাম উৎকীর্ণ করতে গিয়ে বানানের

বিসমিল্লায় গলদ, চৌদিকে হাহা হিহি।

করজোড়ে তোমার কাছে মাফ চাই। কবুল করি, এতদিন

তোমাকে নিয়ে যে ছাইভস্ম লিখেছি বার বার, তার

কোনো মাথামুণ্ডু নেই, কোনো বুনিয়াদই নেই।

মিথ্যার নকল নক্ষত্রখচিত কাঁচুলি নিয়ে খেলা করাই

আমার দ্বিতীয় স্বভাব, এতদিনে তোমার

অজানা থাকার কথা নয়,

তোমার যে হাত কখনো স্পর্শ করার

সুযোগ কিংবা সাহস আমার হয়নি,

তোমার যে ঠোঁট কখনো যুক্ত হয় নি আমার ওষ্ঠে,

তাদের কলুষিত করেছে আমার মিথ্যা বয়ান।

আমার এমনই বসিব, কল্পনা আমাকে ফুসলিয়ে

তিলকে তাল বানিয়ে নিয়েছে। ভালোবাসার

কাঙাল আমি, তোমার মধুর সৌজন্যকে

তরজমা করে নিয়েছি প্রেমে এবং আমার বেহুদা

বেশরম কলম, অতিরঞ্জনে বেজায় দড়, তোমাকে

পর্বে পর্বে বিব্রত করেছে। এই মুহূর্তে ওর গালে চড়

কষাতে ইচ্ছে করেছে; কেননা সে ছন্নছাড়া,

অবাস্তব স্তবকের রচয়িতা।

আমার কলমের বেহায়াপনায়, রংবাজিতে

আমি নিজেই তাজ্জব।

তোমাকে প্রবাল সিঁড়ি থেকে নামিয়ে আমার

কল্পনাজীবী লেখনী আমার বাঁ পাশে

বসিয়ে দিয়েছে জ্যোৎস্নাধোয়া দোলনায়।

তুমি আমার আলিঙ্গনে

ছিপছিপে নৌকোর দোলা, এরকম একটা ছবি

ফোটে তার কয়েকটি আঁচড়ে।

তুমি আমাকে কখনো এমন কিছুই বলোনি,

যাতে মনে হতে পারে তোমার হৃদয়ে

আমার উদ্দেশে ছিল ভালোবাসার বিচ্ছুরণ।

রৌদ্র-জ্যোৎস্না, পানিতে টইটুম্বুর দীঘি

আর হাওয়ায় স্পন্দিত গাছের পাতার ঝিলিমিলি

যা কিছু জপিয়েছে আমাকে

তাকেই তোমার উচ্চারণ ঠাউরে

আমি খুশিতে ডগমগ

যদি তুমি ভুলে যাও আমার বলপেনের

অপরিণামদর্শী উচ্ছলতা, তাহলে আমার

অপরাধের বিষবৃক্ষ উৎপাটিত শেকড়বাকড় সমেত।

যদি বলো, এই বেল্লিককে ছুঁড়ে ফেলে দিই

শ্মশানঘাটের দাউ দাউ চিতায়

অথবা মাছের মড়ক লাগা বুড়িগঙ্গায়।

এতকাল আমার যে অক্ষরমালা

তোমার গলায় পরিয়েছি বলে ঢি ঢি

পড়ে গ্যাছে পাড়ায় পাড়ায়, আসলে তার

একটি মুক্তোও সাচ্চা নয়,

এটা কেউ একবারও ভেবে দেখলে না।

তুমি ছাড়া কে ওদের বলে দেবে যে, যদি কেউ

জলাশয় ভেবে মরীচিকার পেছনে ছুটে মরে দিশেহারা

তবে ভ্রষ্ট পথিকের আর্তনাদের জন্যে

মৃগতৃষ্ণিতাকে দায়ী করা অন্যায়।

কী আনন্দ পায় ওরা বেবুনিয়াদ ছায়ার মহল বানিয়ে?

যারা আমাকে সাতবার

মাটিতে পুঁতে ফেটে পড়ে অট্রহাসিতে

আর গায়েব লাঠিসোটা নিয়ে

লড়াই করে আমার ছায়ার সঙ্গে দিনভর, রাতভর,

আমার হাতে স্বরচিত মিথ্যার কাঁচুলি দেখেই তারা ঠাউরে

নিয়েছে সত্যের নগ্নতার সঙ্গে আমার মাঝামাখি।

আমার এই স্বীকারোক্তির পর

কেউ আর তোমাকে দেখে মুখ টিপে হাসবে না,

বিব্রত হবে না তুমি

আমার লজ্জা আর পাপ উন্মোচন করে

আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে

আমি তোমাদের সবাইকে মুক্তি দিলাম।

মনগড়া ভুল স্মৃতিগুলোকে আঁকড়ে থেকে

চড়ায় মুখ থুবড়ে রক্ত ভেজা বুকে

কীভাবে বেঁচে থাকা যায়

ভালোবাসার চৌচির খরায়, এখন থেকে

এটাই আমার অনুশীলন।

হঠাৎ লেখার টেবিলে আমার কলম

স্যামসনের মতো পেশী ফুলিয়ে, ঝাঁকড়া চুল দুলিয়ে

গরগরে স্বরে করলো উচ্চারণ-

‘আমাকে মিথ্যেবাদী আখ্যা দিয়ে

কার কার মুখ বন্ধ করতে চাও, কবি?’

  (হৃদয়ে আমার পৃথিবীর আলো কাব্যগ্রন্থ)


একটি বাগান

 – শামসুর রাহমান 

নিশ্চয় তোমার মনে আছে একটি বাগান তুমি

আর আমি খুব গোপনীয়তায় সাজিয়েছিলাম

রঙ বেরঙের ফুলে। ইচ্ছে করে বাগানের নাম

রাখিনি আমরা, শুধু গড়েছি সুন্দর পুষ্পভূমি

পানি ঢেলে চারার শিকড়ে তুলে ফেলে পরগাছা

অগণিত। সে বাগানে নানা পাখি দ্বিধাহীন এসে

শুনিয়েছে গান আমাদের, কী মধুর সুর ভেসে

গেছে দূরে কোথাও, শিখেছি কাকে বলে তীব্র বাঁচা।

অথচ বসন্তদিনে চলে গেলে তুমি অকস্মাৎ

কাটিয়ে সকল মায়া বাগানের। ঝরে যাচ্ছে ফুল

যত্নের অভাবে, ক্রমাগত বেড়ে ওঠে বুনো ঘাস,

আমি আর কত পারি একা একা? দিন যায়, রাত

আসে, তুমি আসো না এখানে ছিঁড়ে যায় মর্মমূল

এবং বাগানময় বয় শুধু প্রেতের নিশ্বাস।

   (মাতাল ঋত্বিক কাব্যগ্রন্থ)


স্পর্শ

  – জয় গোস্বামী 

এতই অসাড় আমি, চুম্বনও বুঝিনি ।

মনে মনে দিয়েছিলে, তাও তো সে না-বোঝার নয়-

ঘরে কত লোক ছিল, তাই ঋণ স্বীকার করিনি ।

ভয়, যদি কোন ক্ষতি হয় ।

কী হয়? কী হতে পারতো? 

এসবে কী কিছু এসে যায়?

চোখে চোখ পড়ামাত্র ছোঁয়া লাগলো চোখের পাতায়-

সেই তো যথেষ্ট স্বর্গ- সেই স্পর্শ ভাবি আজ; 

সেই যে অবাক করা গলা

অন্ধকারে তাও ফিরে আসে…

স্বর্গ থেকে আরো স্বর্গে উড়ে যাও আর্ত রিনিঝিনি

প্রথমে বুঝিনি, কিন্তু আজ বলো, দশক শতক ধ’রে ধ’রে

ঘরে পথে লোকালয়ে স্রোতে জনস্রোতে আমাকে কি

একাই খুঁজেছো তুমি? 

আমি বুঝি তোমাকে খুঁজিনি?